আশান উজ জামান

দেখা। লেখা। পড়া

বয়স হয়েছে ডাস্টবিনটার। জোর পায় না গায়। দিনে ঝিমায়, রাতে ঘুমোয় মরার মতো। তবে সে রাতে সে জেগেই ছিল।
তখন মাঝরাত। এগিয়ে এলো চারটা আততায়ী পা। প্রসারিত হলো দ্বিধান্বিত দুটোহাত।
এমনিতে কে কী দিলো না দিলো তাতে মাথাব্যথা নেই তার। কিন্তু ওদের ফেলে যাওয়া কাপড়ের পুঁটলিটা দেখেই শিউরে উঠতে হলো। পুঁটলির ভেতর প্রাণ! উঁকি দিচ্ছে নতুন দুটো চোখ। আর ঝকঝকে আলোকিত মুখ।
পালাতে থাকা ত্রস্ত পাগুলো তখনও দৃষ্টিসীমায়। সরে যাচ্ছে তারা, দূর থেকে দূরে, কেউ যেন বুঝে না ফেলে।
বাচ্চাটা তখন কাঁদছে আকাশ ভিজিয়ে।
তার হয়তো খিদে পেয়েছে। মুখের ভেতর তাই ঢুকে গেল কীট।
তার হয়তো শীত লাগছে। সারাগায়ে তার আটকে থাকলো পোকা।
সে তখন মায়ের কাছে যাবে। বাতাসে তাই ছুড়েই গেলো পা।
সে তখন খুঁজছে বাবার আঙুল। মুঠোভরে তার শুন্যতাই জমলো শুধু।
দেখতে দেখতে বিনটা যেন পাগলপ্রায়। বুকের ভেতর ঝড়ের ঘূর্ণি তুলল পাখিটার সংগ্রাম।
একার যুদ্ধ একাই লড়ে সকালে যখন নিথর হয়ে পড়ল জাদুসোনাটা, পাঁজরছেঁড়া আর্তনাদে সে ডাকতে থাকলো স্রষ্টাকে। ‘ডাস্টবিনই যদি করলি আমারে, চলার শক্তিটুকু দিলিনে ক্যান? মানিকটারে তো বাঁচাতে পারলাম না রে পাষণ্ড।’
কিন্তু স্রষ্টা তাকে মানুষ করে পাঠায়নি বলে যে সে কৃতজ্ঞ, সেটা জানাতে ভুলে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.