মা-বাবার বড় ঘরে বড় যে দরজা, সেই দোরে ঝুল খেয়ে ঝুল খেলে ঝুলতে শিখেছি। তারপর ছুটে গেছি ছুটে চলা জীবনের বাসে। ঝুলে ঝুলে ঝুলে গেছে কপালের ভাঁজ। কী যেন কী খুঁজে নিতে ফিরে এসে আজ সেখানে দাঁড়াই। আর দেখি রঙঢঙা শিশুকাল ধরে রেখে জীর্ণ সে দরজা, কী ছোট কী ছোট! যতগুলো দিন গলে গলে বেরিয়েছে এ দরজা দিয়ে, ততগুলো রাত এসে গেঁথে গেছে বাঁধা দরজায়। তারা যেন কুরে কুরে খেয়ে খেয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে তাকে। বছরে বছরে তাই ছোট আরো ছোট হলো সে। দেখাদেখি ছোট হলো আরো কত বড় বড় লোক। সবচেয়ে ছোট আজ মা বাবার দেহ, মননেও শিশু মনে হয়। কথা আর বায়নাও শিশুদের মতো। আমি আজ বড়, তাই জড়দের মতো বাজে বাজখাঁই গলা। চোখদুটো পাথরের; মাঝে মাঝে কাঁদে শুধু, ঠাওরিয়ে দেখে না কিছু। মা-বাবার বায়নায় মা-বাবার বারণে টলি না; সবকিছু পায়ে দ’লে যাই। হেলে ফেলে ফিরে যাই বড়দের জড়দের টাকা আর মিথ্যার বাজিখেলা পাঁকে। ফিরে যাই সে প্রাসাদে, আমার বাবুটা খুব খুঁজছে আমাকে। সন্তান ডাকে যদি, আর কারো ডাকে কি গো পিছু ফেরা যায়? ঘর আর দরজাটা, মা ও বাবা এঁটোকাঁটা, উঠোনের মতো পড়ে থাকে। পড়ে থাকে ছোট হতে; হতে হতে ভ্রূণ হবে তাই। মিশে যাবে সময়ের গায়।
অবিরাম ছুটে যেতে যত জোর লাগে, সময় তা মা-বাবার নাড়ি শুষে পায়।
[২০১৮]